দুবছর আগের কথা। দিন সম্ভবত এরকমই ছিলো। অনার্স প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলছিলো। শেষদিনে ইচ্ছা হলো কেমুসাস পাঠাগারে সন্ধ্যাটা কাটাবো। বিকেল পাঁচটায় যখন হল থেকে বেরুলাম, তখন রীতিমতো খিদে লেগে গেছে। এখন দরগাগেইটে বিশ-পঁচিশটাকায় পেটপুরে খিচুড়ি পাওয়া যায়। তখন এই দোকানের খবর জানতাম না। বর্তমান নুরজাহান হোটেলের সামনে তখন একটা টি স্টল ছিলো। পাশের দোকান থেকে বিশটাকা দিয়ে একপ্যাকেট মিনি বাটারটোস্ট কিনলাম। বসলাম গিয়ে ওই টি-স্টলে। রাজ্যের ক্ষুধা নিয়ে চায়ের অর্ডার দিলাম। গরম গরম চায়ের সাথে বাটার টোস্ট মন্দ লাগছিলো না। দুইখানা বিস্কুট দিয়ে এককাপ চা খেয়ে আরেক কাপ চায়ের অর্ডার দিলাম। তারপর আরেকখানা বিস্কুট গলাধঃকরণ করে আবিষ্কার করলাম, উদর দস্তুরমতোই পূর্ণ হয়ে গেছে। কোনোরকমে চারখানা বিস্কুট শেষ করে নিজের খাওয়াবাবদে অক্ষমতাকে তীব্র তিরস্কার করে উঠে দাঁড়ালাম। এখনো আধপ্যাকেট বিস্কুট রয়ে গেছে। কী করবো এগুলো নিয়ে? ভালোই বিপদে পড়লাম। এখন বিষয়টা ভাবলে হাসি পায়, কিন্তু তখন ঠিকই বিপদে পড়েছিলাম। পরীক্ষার্থীর সাথে এক্সট্রা ব্যাগ থাকার প্রশ্ন ওঠে না। আবার একটা পলিথিনের ব্যাগ কিনে আধপ্যাকেট বিস্কুট বয়ে বেড়াবো, এই মানসিকতা এখনো নাই। অপচয়ও করতে পারবো না। গেলো মেজাজ চড়ে...
হঠাত্ করেই কেমুসাস গেইটের উল্টো দিকের ফুটপাথে চোখ গেলো। রাস্তায় শুয়ে আছে এক মহিলা। ভিখারিনী হবে
হয়তো। গেলাম এগিয়ে। মনে সংকোচ ছিলো। আধখাওয়া বিস্কুটের প্যাকেট কি দেওয়া উচিত? কাউকে দান করলে তো
ভালো কিছুই দিতে হয়। হঠাৎ মনে পড়লো আমার দাদীর কথা। ছোটবেলায় ওই মহিলা পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে হাঁটতে
বেরুলে কেউ চা দিলে বিস্কুটটা খেতো না। জীর্ণ আচলের খুটে বেঁধে ওইটা আমাদের খাওয়াতে নিয়ে আসতো। বুড়ি
আজ মরে গেছে এগারো বছর হয়ে গেলো। ফুটপাথের এই বুড়িকে দেখে মনে পড়ে গেলো সেই অদ্ভুদ মায়ামাখা শৈশব!
এই মহিলারও কি এমন কোনো নাতি নেই? পাশে গিয়ে বসলাম। মনে হলো এই বুড়িই আমার দাদী। বললাম- “বুড়ি, এই
বিস্কুটের প্যাকেটটা দ্যাখো... আধখানা খেয়ে আর খেতে পারছি না। তুমি কি খাবে?”
ভালো কিছুই দিতে হয়। হঠাৎ মনে পড়লো আমার দাদীর কথা। ছোটবেলায় ওই মহিলা পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে হাঁটতে
বেরুলে কেউ চা দিলে বিস্কুটটা খেতো না। জীর্ণ আচলের খুটে বেঁধে ওইটা আমাদের খাওয়াতে নিয়ে আসতো। বুড়ি
আজ মরে গেছে এগারো বছর হয়ে গেলো। ফুটপাথের এই বুড়িকে দেখে মনে পড়ে গেলো সেই অদ্ভুদ মায়ামাখা শৈশব!
এই মহিলারও কি এমন কোনো নাতি নেই? পাশে গিয়ে বসলাম। মনে হলো এই বুড়িই আমার দাদী। বললাম- “বুড়ি, এই
বিস্কুটের প্যাকেটটা দ্যাখো... আধখানা খেয়ে আর খেতে পারছি না। তুমি কি খাবে?”
বুড়ি হেসে হাত বাড়িয়ে প্যাকেটটা নিয়ে নিলো। তারপর ঢুকিয়ে দিলো বোচকার ভেতর। কার জন্য প্যাকেটটা
বস্তাবন্দী করলো বুড়ি? আমি আর সেই তদন্তে যাইনি।
বস্তাবন্দী করলো বুড়ি? আমি আর সেই তদন্তে যাইনি।
বিস্কুট
Reviewed by আহমাদ সালেহ
on
April 04, 2018
Rating:
No comments: