Looking Video Editor? Designer? Publishing Experts?

Looking Video Editor? Designer? Publishing Experts?
For Your Trusted and Skilled Partners...

নতুন লেখক, পুরান প্যাঁচাল


ক্রিয়েটিভিটি একটা গ্রেট ম্যাটার। সাথে পরিশ্রম। এই দুই জিনিস থাকলে উপরে উঠার জন্য মই লাগে না, পায়ের নীচের মাটিই আপনাকেসুদ্ধ নিয়ে ধীরে ধীরে উঁচুতে উঠে যায়।
নতুন লেখকদের মধ্যে মই না পাওয়া নিয়ে এক ধরণের হাহাকার দেখা যায়। বড় লেখকরা তাদের প্রমোট করেন না, পাঠকরা তাদের বই ছুঁয়েও দেখে না, বন্ধুবান্ধবদের গিফট করলে পাইছি বইলাও ফেবুতে একটা পোস্ট দেয় না, রিভিউ তো বহুত দূরের ব্যাপার... ইত্যাদি ইত্যাদি নানান সমস্যা।
এইসব আঁকুপাঁকু টাইপের সমস্যার প্রতিকার কী? দুইটা সমাধান চোখের সামনে দেখতে পাই।

১) জীবনের প্রথম বই লিখে লাইমলাইটে এসেছিলের আরজ আলী মাতুব্বর। আবার তার সম্পূর্ণ বিপরীত বিষয়ের ওপর জীবনের প্রথম বই লিখে লাইমলাইটে এসেছেন আরিফ আজাদ। গ্রামে গ্রামে হেঁটে হেঁটে চাষাভূষোর গল্প শোনা ছিলো চন্দ্রকুমার দে নামের এক ভদ্রলোকের কাজ। বহু বছরের পরিশ্রমের পর তাঁর সংগৃহীত গল্পগুলো প্রকাশিত হয় 'মৈমনসিংহ গীতিকা' নামের এক সংকলনে। চন্দ্রকুমার দে মরে গেছেন। কিন্তু তার নামটা শুধুমাত্র তাঁর কাজের কারণে সিন্দাবাদের ভুত হয়ে বাংলা সাহিত্যের ঘাড়ে আজো চেপে আছে। অমর চন্দ্রকুমার দে।
এই টাইপের আরেক ভদ্রলোক ছিলেন দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার। উচ্চবিত্ত হয়েও দিনের পর দিন জেলেদের, মাঝিদের, কৃষকদের মাঝে কাটিয়েছেন । 'ঠাকুরমার ঝুলি’ নামটা মুছুন বাংলা ভাষা থেকে, বাংলা দেশ থেকে!!! পারা যাবে?
এবং অতি আনন্দের কথা যে, আমাদের জমিদারবাবু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এই চাষাভূষোদের মুখের ছড়া সংগ্রহের কাজ করেছেন। তিনিই স্বহস্তে প্রায় ২০০ গান সংগ্রহ এবং প্রকাশ করে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসেন মহর্ষি লালন সাঁইকে। রবীন্দ্রনাথ আর কিসসু না করেও কেবল এই দুটো কাজ করলেও বাংলা সাহিত্য তাঁর কাছে চিরঋণী থেকে যেতো।
তো আমরা যারা নতুন কলম হাতে ধরেছি, তাদের কী এরকম কিছুই করার নেই? এই প্রশ্নটির জন্য এতো কথার অবতারণা। আপনার যদি ক্রিয়েটিভিটি না থাকে, পরিশ্রমের মানসিকতা না থাকে, তাহলে বই লেখার মতো দুঃসাহস করেন কোন কারণে? জাস্ট অপোগণ্ড, আমড়া কাঠের ঢেঁকি না হলে কেউ নিজেকে নতুন লেখক আর পুরনো লেখক শব্দে বিভক্ত করতে পারে না।

২) ইদানিং লেখকরা প্রচুর পরিমাণে বই বের করছেন নিজের টাকা দিয়ে। প্রকাশকরা তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ২০০-৩০০ বই তুলে দিচ্ছেন, এটাই এখন তাদের ব্যবসা। মাননীয় প্রকাশকদের কাজ দেখে এ মুহূর্তে একটা গল্প মনে পড়ে গেলো। বন্ধুবর তুহিন গ্রামের বাড়ি থেকে কয়েকটা পাকা তাল নিয়ে এসেছেন সিলেটের লজিংবাড়িতে। লজিংয়ের বুড়ি দাদি সুন্দরভাবে তালের শাঁসটা কেটে ফেলে দিয়ে শক্ত পাথুরে বিচি নাতিদের নিয়ে খেতে লাগলেন। তুহিন তো আহাম্মক!! আরে, এরা দেখি তালের আসল স্বাদের জিনিসটা ফেলে দিয়ে বিচি চিবুচ্ছে।
মূলত আমাদের অঞ্চলের মানুষ তালের অপ্রাচুর্যতাহেতু তালের পিঠা তৈরি করতে জানে না। তাল বলতেই তারা তালের বিচিকে খাওয়ার যোগ্য একমাত্র বস্তু মনে করে। আর তুহিনদের এলাকায় তালের শাঁস থেকে তারা রস বের করে, সেই রস দিয়ে পিঠা বানায়, রসিকরা তালের মদ ‘তাড়ি’ বানিয়ে খায়।
যাইহোক, বলতে চাচ্ছি, আমাদের বেরসিক প্রকাশক সম্প্রদায়ের এখনো তালের ষাঁস খাবার যোগ্যতা জন্মায়নি। এনারা বৃহত্তর পাঠককূলকে ভালো বই দিয়ে ব্যবসা না করে ব্যবসা করছেন লেখকদেরর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ব্যবসা করে।

কিন্তু এ নিয়ে লেখকদের হিনম্মণ্যতার কোনো কারণ নেই।  জীবনানন্দ দাশ তাঁর প্রথম দুটি কাব্যগ্রন্থ বের করেন নিজের টাকায়। চাকরি ছাড়েন কবিতার জন্য। কিন্তু জীবদ্দশায় তিনি মূল্যায়ন পাননি। মৃত্যুর পর তার ‘রূপসী বাংলা’ আর ‘বনলতা সেন’ বিক্রি করে যতোগুলো প্রকাশক কোটিপতি খাতায় নাম লিখিয়েছেন, ততগুলো চোর বাটপারও এদেশে নেই। এনারা কেউই দাশ পরিবারের ন্যায্য রয়ালিটি দেননি।
নিজের টাকা দিয়ে যেসব নতুন লেখক বই বের করছেন, তাদের প্রতি আমার বিনম্র অনুরোধ। এই অনুরোধগুলো আমার দ্বিতীয় সমাধানের অন্তর্ভূক্ত।

ক. আপনার বইগুলো দয়া করে অজায়গায় গিফট করবেন না। উলুবন মুক্তার মর্ম বুঝবে না।
খ. সমঝদার মানুষকে বই গিফট করুন, অথবা স্বল্প দামে বইটি কিনতে দিন। বন্ধুদের ফালতু গিফট করতেও বলি না, জবাই করতেও বলি না। ন্যুনতম কিছু বিনিময় যে দেবে, শুধুমাত্র তাকেই বই দিন। নিজের টাকার দামের জন্য হলেও অন্তত বইটি যত্নে রাখবে।
গ. এই অনুরোধটা সবচেয়ে জোরালো ভাষায় করবো। আপনার বইগুলো পাবলিক লাইব্রেরিতে গিফট করুন। মিনিমাম ৫০টা গণপাঠাগারে নিজ খরচে বই পাঠিয়ে দিন, যদি আপনার সৃজনশীলতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস থাকে। বাংলাদেশে যুদ্ধ না হলে আপনার হায়াত ৫০০ বছর বেড়ে যাবে।

শেষকথা:
প্রিয় লেখকবৃন্দ, অনুরোধ আপনাদের- নিজেকে ছোট লেখক বলে অপমানিত করবেন না। তুলনা করবেন না কারো সাথে। পাঠককে দোষারোপ করবেন না। পাঠক তেলা মাথায় তেল দিতেও কার্পণ্য করে না, যদি সেই তেলের পয়সায় কিছু জ্ঞান অথবা নিছক আনন্দও মেলে। পাঠককে এরকমই কিছু দিন, যাতে সে আপনার বই কেনার পর নিজেকে “ঠকে যাওয়া ক্রেতা” মনে না করে। বিশ্বাস রাখুন আপনার সৃজনশীলতার ওপর। আপনার নিয়ত এবং পরিশ্রমই আপনাকে আপনার কাঙ্ক্ষিত মঞ্জিলে পৌঁছে দিতে পারে। ভালো থাকবেন।
নতুন লেখক, পুরান প্যাঁচাল নতুন লেখক, পুরান প্যাঁচাল Reviewed by আহমাদ সালেহ on April 01, 2018 Rating: 5

No comments:

Powered by Blogger.